বাংলার সেরা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

স্বাদে অতুলনীয়

বাংলার মিষ্টির ইতিহাস

এটি বিশ্বাস করা হয় যে বাংলার পুরববতি রাজধানী -” গৌড় ” এর নাম ” গুড় ” থেকে এসেছে, যার অর্থ  গুড় , তাই এতি স্পষ্ট যে বাংলার মিষ্টি  প্রতি  ভালোবাসা ইতিহাসে আনেক আগে থেকেই। 

বাংলার বিখ্যাত ৫ জন ময়রা

ভোলা-ময়রা

শুধু ময়রা হিসেবে নয়, এই লোকটির খ্যাতি ছিল কবিয়াল হিসেবেও। পুরো নাম শ্রী ভোলানাথ মোদক। কলকাতার বাগবাজারে ছিল তার মিষ্টির দোকান। তার দোকানে লুচি আর পরোটার সাথে পরিবেশন করা হতো হরেক পদের মিষ্টি।নবাবি এবং ইংরেজ আমলের ময়রাদের মধ্যে ভোলানাথই ছিলেন প্রথম, যিনি নিজেকে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত করেন। তার মিষ্টান্ন তৈরির হাত যেমন পাকা ছিল, তেমনি দক্ষতার সাথে তিনি কবিগান করতেন। বিখ্যাত কবিয়াল হারু ঠাকুর ও যগা বেনে ছিলেন তার গুরু।খুব বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও তার কবিগানের শব্দযোজনা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। পিতা কৃপানাথের ছোট্ট একটি ঝুপড়ি দোকানকে তিনি সেসময়ের কলকাতার সবচেয়ে বড় মিষ্টির দোকানে পরিণত করেন। তার আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি ছিলেন শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ বাহাদুরের সভাসদ। বাঙালি যুগ যুগ ধরে ভোলা-ময়রাকে তার মিষ্টি আর কবিগানের জন্য মনে রাখবে।

ভীম চন্দ্র  নাগ

মিষ্টির জগতে শতাব্দীর স্বাক্ষরকারীগণের অন্যতম একজন হলেন ভীমচন্দ্র নাগ। তিনি ভীমনাগ নামেই পরিচিত ছিলেন। এই ভদ্রলোক একটি মিষ্টির জন্যই বিখ্যাত হয়ে আছেন, যা লেডিকেনি নামে সুখ্যাতি পেয়েছে। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল চার্লস ক্যানিংয়ের সস্ত্রীক কলকাতায় আগমন উপলক্ষে ভীমনাগকে একপ্রকার মিষ্টি তৈরি করতে বলা হয়, যেটি লেডি কেনিংকে পরিবেশন করা হয়েছিল। লেডি কেনিং সেই মিষ্টি খান এবং ভীমনাগকে পুরস্কৃত করেন। তারপর থেকে সেই মিষ্টি পুরো ভারতে লেডিকেনি নামে প্রসিদ্ধ হয়।লেডিকেনি ছাড়াও ভীমনাগের সন্দেশ আর মনোহরা মিষ্টি বিখ্যাত ছিল। কলকাতার বউবাজারে ছিল তার মিষ্টির দোকান। তিনিও পিতার ছোট্ট দোকানকে মিষ্টান্নের ভাণ্ডারে পরিণত করেন।

ভীমনাগের মিষ্টির দোকানের ব্যাপারে আরেকটি কাহিনী প্রচলিত আছে। একবার বিখ্যাত ঘড়ি নির্মাণ কোম্পানি কুক এন্ড কেলভির প্রোপ্রাইটর চার্লস কেলভি আসেন ভীমনাগের দোকানে মিষ্টি খেতে। মিষ্টি খেয়ে তিনি খুব মোহিত হন। ভদ্রলোক ভীমনাগকে জিজ্ঞেস করেন, “কী হে ভীমনাগ, তোমার এত বড় মিষ্টির দোকান আর সেই দোকানে কোনো ঘড়ি নেই কেন?

ভীমনাগ সাহেবের এই প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হয়ে পড়েন। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলেন, “আজ্ঞে, কেনা হয়ে ওঠেনি।” তারপর কেলভি সাহেব তাকে বলেন যে, তিনি তাকে একটি বড় ঘড়ি উপহার দেবেন। তখন ভীমনাগ সাহেবকে অনুরোধ করে বলেন, “সাহেব, আমার কর্মচারীরা তো ইংরেজি জানে না। তাই বাংলায় লেখা ঘড়ি পেলে ওদের সুবিধে হতো।” কুক সাহেব সেদিন মুচকি হেসে ভীমনাগকে তথাস্তু বলে আসেন। তার কিছুদিন পর লন্ডন থেকে বাংলা হরফে লেখা ডায়ালের একটি বৃত্তাকার ঘড়ি ভীমনাগের দোকানে পাঠিয়ে দেন, যেটি এখনও সেই দোকানে শোভা পাচ্ছে।

নবীন চন্দ্র দাস

‘রসগোল্লার কলম্বাস’ খ্যাত এই ভদ্রলোক জন্মেছিলেন কলকাতায়। তিনি এন সি দাস নামেও পরিচিত। কলকাতার বাগবাজারে ছিল তার মিষ্টির দোকান। তিনি ছিলেন ভোলা-ময়রার নাতজামাই। নবীন ময়রা নামে তিনি ছিলেন পুরো কলকাতায় প্রসিদ্ধ।আপামর বাঙালির প্রাণের মিষ্টি রসগোল্লার উদ্ভাবক তিনি। রসগোল্লা একসময় বাংলার সাংস্কৃতিক প্রতীকে পরিণত হয়েছিল।সেই মেয়ের প্রদত্ত শর্তগুলো মেনে অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর তৈরি হয়েছিল রসগোল্লা। পরে এই রসগোল্লাই দুজনকে প্রণয়সূত্রে বেঁধেছিল। মেয়েটির নাম ছিল ক্ষীরোদমণি দেবী।

রসগোল্লা তৈরি করতে বারবার ব্যর্থ হওয়ার পর একদিন নবীন ময়রা বসে আছেন বাগবাজার ঘাটে খিটখিটে মেজাজে। পাশে বসে গায়ে তেল মাখছিলেন ভীমচন্দ্র নাগ। নবীন ময়রার খিটখিটে আচরণ দেখে সেদিন ভীমনাগ তাকে বলেছিলেন, “মুখে আর মনে মিষ্টি না থাকলে হাত দিয়ে মিষ্টি গড়বে কীভাবে?” নবীন ময়রা সেদিন তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা পেয়েছিলেন। রসগোল্লা ছাড়াও নবীন ময়রা যে মিষ্টান্নগুলোর জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন সেগুলো হলো বৈকুণ্ঠভোগ, আবার খাবো, দেদো সন্দেশ, কাঁঠাল সন্দেশ, আতা সন্দেশ এবং কস্তূরী পাক।

কৃষ্ণ চন্দ্র দাস

নবীনচন্দ্র দাসের একমাত্র পুত্র এবং যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দাস। সংক্ষেপে কে সি দাস। তিনি রসমলাই ও ভ্যাকুয়াম টিনজাত রসগোল্লার উদ্ভাবন করেন। বিজ্ঞানপ্রিয় এই মানুষটি প্রথম বৈজ্ঞানিক ও যান্ত্রিক উপায়ে তার মিষ্টান্নভাণ্ডারে মিষ্টির প্রক্রিয়াজাতকরণ শুরু করেন। বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসাকে সুদূরপ্রসারী করেন। তারই প্রচেষ্টায় রসগোল্লা সর্বভারতীয় একটি প্রতীক ও জাতীয় মিষ্টিতে পরিণত হয়। কৃষ্ণচন্দ্র দাস কুলীন ঘরানার শ্বেতাঙ্গিনী দেবীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তার পাঁচ পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ সারদা চরণ দাসের সাথে ১৯৩০ সালে ‘কৃষ্ণচন্দ্র দাস মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ নামে তিনি দোকান শুরু করেছিলেন। কে সি দাস প্রাইভেট লিমিটেড আজও ভারতে দাস পরিবারের ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেছে। কৃষ্ণচন্দ্র দাস শুধু একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন উদ্ভাবক ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিত্ব।

 

সারদা চরণ দাস

কৃষ্ণচন্দ্র দাসের পাঁচ পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ সারদা চরণ দাস। ১৯৩৪-এ বাবা কৃষ্ণচন্দ্র দাস মারা যাওয়ার এক বছর পর ধর্মতলার মোড়ে সম্পূর্ণ আধুনিক চিন্তা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কে সি দাস রেস্তোরাঁ’। উচ্চারণের সুবিধার জন্য রেস্টুরেন্টের নাম এমন রাখা হয়। তৎকালীন ইংরেজ ও ফরাসিদের মাঝে এই রেস্তোরাঁ ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়। সারদা চরণ দাস ছিলেন একজন মহান উদ্ভাবক ও উদ্যোক্তা। ১৯৪৫ সালে তিনিই প্রথম বয়লার সিস্টেমে মিষ্টি তৈরি করেন। ১৯৬০-এ তিনি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং লন্ডনে টিনজাত রসগোল্লা রপ্তানি শুরু করেন। তার উদ্ভাবিত মিষ্টিগুলোর মধ্যে অমৃতকুম্ভ সন্দেশ, আইসক্রিম সন্দেশ, ডায়াবেটিক সন্দেশ ও সন্দেশ কেক বিখ্যাত। বলা বাহুল্য, ১৯৮৩ সালে যখন তিনি অমৃতকুম্ভ সন্দেশ তৈরি করেন, তখন তিনি সেরিব্রালের রোগে আক্রান্ত। খাটে শুয়ে শুয়েই তিনি এই মিষ্টান্ন তৈরি করেন।

বাংলার সেরা মিষ্টি

বাংলার সেরা ৫ টি মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

বিনদ বিহারি নাগ এবং গনেশ চান্দরা দত্ত মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

  ঠিকানা ঃ৩ হারে সেন্ট বি . বি. দি বাগ কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ ৭০০০০১

খোলা থাকে ঃ সোম- শনি(সকাল৭-রাত১১)

4/5

বাঞ্ছারাম মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

 ঠিকানা ঃ৫৫/১,রাশ বিহারি এভ, মনোহর পুকুর, কালিঘাট, কলকাতা ,পশ্চিমবঙ্গ ৭০০০২৬

খোলা থাকে ঃ সোম- সনি(সকাল৯-রাত৯)

4/5

বালারাম মল্লিক এবং রাধারাম মল্লিক মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

ঠিকানা ঃ ২, পাদ্দাপুকুর রদ, যদু বাবুর বাজার, ভবানীপু্রকলকাতা ,পশ্চিমবঙ্গ  ৭০০০২০

খোলা থাকে ঃ সোম – শনি ( সকাল ৭ -রাত ৭)

4.3/5

বাংলা মিষ্টি হাব

ঠিকানা ঃ গেট ৩ , ইকো পার্ক ,বিশ্ব বাংলা সরনি, অ্যাকশন এরিয়া ১ ,নিউটাউন, পশ্চিমবঙ্গ ৭০০১৫৬

খোলা থাকে ঃ সোম –  শনি ( সকাল ১০ -রাত ৯)

3.9/5

ভীম চন্দ্র নাগ

ঠিকানা ঃ ৪৬ স্ট্যান্ড রোড , ফেয়াড়লী  প্লেস, বড়বাজার মার্কেট , কলকাতা , পশ্চিমবঙ্গ ৭০০০০৭

খোলা থাকে ঃ সোম – শনি ( সকাল ৮ – রাত 8)

4.7/5
Scroll to Top